মাসুদ আলম: [৩] পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও মেয়ের নামে বান্দরবানের সুয়ালক ও লামার ডলুছড়িতে রয়েছে একশ একর জমি। 

[৪] স্থানীয়দের কাছে এসপির জায়গা নামে পরিচিত এসব জমিতে রয়েছে মাছের প্রজেক্ট, গরুর খামার, ফলের বাগান ও রেস্টরুমসহ প্রায় কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। এসব জমিতে একসময় অসহায় পরিবারের বসবাস থাকলেও নামমাত্র মূল্যে তাদেরকে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে। এসব জমি কিনতে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াইচিং মারমা। 

[৩] স্থানীয়রা জানান, বান্দরবান পৌরসভার মধ্যমপাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে শাহজাহানের কাছ থেকে বান্দরবান সদর উপজেলার ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগের ৩ নম্বর সিটে ২৫ একর লিজের জমি ক্রয় করেন বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর। যেখানে গড়ে তুলেছেন গবাদিপশুর খামার, মৎস্য প্রজেক্ট, ফলজ, সেগুন বাগান ও বিলাসবহুল খামারবাড়ি। এই খামারবাড়িতে রয়েছে অন্তত অর্ধকোটি টাকারও বেশি গবাদিপশু। 

[৪] এছাড়া বেনজীর পরিবারের নামে লামার ডলুছড়ি মৌজার টংগঝিরিতে রয়েছে আরও ৫৫ একর জমি। একসময় এখানে অসহায় ও গরিব পরিবারের বসবাস ছিল। চাষাবাদের মাধ্যমে তাদের আয়ের একমাত্র উৎস্য ছিল এ জমিগুলো। কিন্তু, অসহায় ও গরিব পরিবারগুলোকে অল্প পরিমাণে অর্থ দিয়ে জোরপূর্বক এসব জমি থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়। 

[৫] বান্দরবান মাঝেরপাড়ার চা অফিস থেকে ১ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ২৫ একরের একটি জমি। জমিটি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও মেয়ের নামে লিজ নেওয়া। এখানে রয়েছে একটি গরুর খামার, কয়েকটি মাছের প্রজেক্ট, একটি এসি রেস্ট রুম, বিভিন্ন ফলজ ও সেগুনবাগান। ভেতরে যেন কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমানায় কাঁটাতারের বেড়ার পাশাপাশি রয়েছে তালা লাগানো একটি গেট। আশপাশে কোনো বসতি না থাকার পরও সেখানে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। হয়েছে ইটের রাস্তা। যা বাগানে গিয়েই শেষ হয়েছে।

[৬] গরুর খামারের দায়িত্বে থাকা লেদু মিয়া ও নজুমুদ্দিন জানান, এটি বেনজীর আহমেদের জায়গা হলেও দেখা-শোনার দায়িত্বে রয়েছে মং ওয়াইচিং। গরুর খামারে বাচ্চাসহ মোট ৩৭টি গরু থাকলেও এবারের কোরবানিতে বিক্রয়যোগ্য গরু রয়েছে ৩৫টি।

[৭] বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াই চিং জানান, পার্শ্ববর্তী জায়গা থাকার সুবাদে সুয়ালকের মাঝের পাড়ায় বেনজীর আহমেদের ২৫ একর জায়গা দেখাশুনার দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে। তবে লামার জায়গা-জমি সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে তার জানা নেই।

[৮] সুয়ালক ইউপি চেয়ারম্যান উ ক্য নু মারমা জানান, বেনজীর আহমেদের সুয়ালক মৌজার মাঝের পাড়ায় জায়গা আছে তা আমি জানি। জায়গাটি সকলের কাছে এসপির জায়গা হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি বাগানটিতে জোত পারমিট করা হয়েছে। তবে বেনজীর আহমেদ জায়গাগুলো কীভাবে নিয়েছেন তা তিনি জানেন না।

[৯] বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, বান্দরবানে বেনজীর আহমেদের জায়গা-জমির তথ্য বা জবরদখল সংক্রান্ত কোনো বিষয় তার জানা নেই। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সম্পাদনা: ইকবাল খান